কোটটাঁদপুর (ঝিনাইদহ ) রাম জোয়াদার : ও বউ ধান ভাঙ্গেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া-দুলিয়া,ও বউ ধান ভাঙ্গেরে’এই ধরনের আঞ্চলিক গান গাইতো আর ঢেঁকির উপর পা দিয়ে ধাপুর-ধুপুর,শব্দে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার গ্রামের গৃহবধুরা ধান ও চাল ভাঙ্গতো।

এছাড়াও ঢেঁকি নিয়ে বাংলায় প্রবাদ বাক্য আছে ‘ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গিয়ে ও ধান ভাঙ্গে’।কয়েক বছর আগেও ধান থেকে চাল ও চাল থেকে আটা তৈরী করতে মানুষের একমাত্র ভরসা ছিলো ঢেঁকি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত গৃহবধুরা ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার কাজ করতো। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আগের মত আর চোখে পড়ে না।ঢেঁকির সেই ধাপুর-ধুপুর শব্দ এখন আর নেই। কালের পরিবত্তে ঢেঁকি এখন শুধুই স্মৃতি। উপজেলার বিভন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ধাপুর-ধুপুর শব্দে একজন গৃহবধূ রুবিনা খাতুন (৪০) নামের গৃহবধু ঢেঁকির উপরে পা দিয়ে চাল ভাঙ্গে।

ঢেঁকিতে চাল থেকে আটা তৈরী করতে গ্রামের অনেকেই তাদের বাড়িতে আসেতো।এখন কম সময়ে মেশিনের মাধ্যমে সহজেই আটা তৈরী করা যায় তবে ঢেঁকি কেন।জানতে চাইলে তিনি বলেন,পিঠা-পুলি তৈরীর ক্ষেত্রে ঢেঁকির তৈরী আটা সবচেয়ে ভালো। এতে পিঠার স্বাদ ভালো হয়।

আর মেশিনে ভাঙ্গানো আটার পিঠা ভালো হয়না তা ছাড়া কম জিনিস মেশিনে ভাঙ্গানো হয় না। তাই পরিবারের প্রয়োজনে অল্পজিনিস সহজে ভাঙ্গতে আর ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এখনো ঢেঁকিটা রেখেছি।

ঢেঁকিতে ময়দা তৈরী করতে আসা গৃহবধু বলেন কষ্ট হলেও আমরা ঢেঁকিতে চাল ভেঙ্গে সেই আটা দিয়ে পিঠা তৈরী করি। এতে পিঠার স্বাদ ভালো হয়।

তবে আগে এই এলাকাতে প্রায় বাড়িতেই ঢেঁকি থাকলেও বর্তমানে কোটচাঁদপুর উপজেলায় ঢেঁকি নেই বলতে গেলে চলে।আগে প্রায় বাড়িতেই ঢেঁকির ব্যবহার ছিলো এখন প্রতিটা গ্রামে কল (আধুনিক মাড়াই যন্ত্র) হওয়ার করনে ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে।গ্রামের প্রবীনদের মুখ থেকে শোনা যায় ঢেঁকি কাঠ দিয়ে তৈরী এক ধরনের মেশিন। ধান,চাল,পিঠার গুড়া, চিড়া-মুড়ির গুড়া, হলুদ-মরিচ গুড়া করার জন্য প্রাচীনকালে ঢেঁকির ব্যবহার চিলো এবং আগে মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে তাদের জিবিকা নির্বাহ করতো। সে সময় ঢেঁকির বেশ কদর ছিলো।বর্তমানে ঢেঁকি আর চোখে পড়ে না।

দু’একটি থাকলেও তার ব্যবহার নেই। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে বিদ্যুৎ ও তেল চালিত যন্ত্রের মাধ্যমে ধান ও চাল ভাঙ্গার ফলে প্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ঢেঁকি এই অঞ্চলথেকে বিলুপ্ত প্রায়।